গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি না এবং উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে আজকের এই আর্টিকেল পোষ্টে। একজন নারীর গুরুত্ত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে গর্ভাবস্থায় নিজের শরীরে পুষ্টি উপাদান গুলো নিশ্চিত করা। কারণ গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকেই গর্ভে থাকা শিশুর সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। আর পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং গর্ভবতী মায়ের শক্তির উৎস হচ্ছে শর্করা।

গর্ভাবস্থায়-গ্লুকোজ-খাওয়া-যাবে-কি
গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি শর্করা বা গ্লুকোজ এর চাহিদা পূরণ না হয় তাহলে সেই মায়ের শরীর দূর্বল হয়ে যায় এবং গর্ভে থাকা সন্তানের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি না এবং গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়ার উপকারিতা।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো জানুন

সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি না জানতে চেয়েছেন এর উত্তর হচ্ছে খাওয়া যাবে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ গ্লুকোজ হচ্ছে একটি শক্তির উৎস। গ্লুকোজ খেলে শরীরে এনার্জি বাড়ে। গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খেতে পারবেন তবে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মানতে হবে।
  • গ্লুকোজ শরীরের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • শিশুর ভ্রূণের সঠিক বিকাশে গ্লুকোজ অপরিহার্য।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • পরিমাণ মতো পরিমাণে গ্লুকোজ খেতে হবে। কারণ বেশি পরিমাণে খেলে সেটা আপনার বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়ার আগে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা করা গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে নানা রকম পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হয় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য। আর গ্লুকোজ হচ্ছে একধরনের শর্করা যা রক্তে দ্রুত মিশে যায় এবং শক্তি প্রদান করে। এই সময়ে গর্ভাবস্থায় সঠিক শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। আর এই শর্করা চাহিদা পূরণ করতে গ্লুকোজ খুবই উপকারী। তবে ডায়াবেটিস থাকলে এটি না খাওয়ায় ভালো। গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো।
  • গ্লুকোজ শরীরে দ্রুত শক্তি প্রদান করে। যেটা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য খুবই দরকারি। মা ও শিশুর শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • গ্লুকোজ মা ও শিশুর মধ্যে পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। কারণ এটি দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং শরীরে শক্তি প্রদান করে।
  • শিশুর ভ্রূণের বিকাশ গঠনের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে গ্লুকোজ সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী মায়ের শরীরের দূর্বলতা কমায়
  • গ্লুকোজ হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় যেটা খুবই জরুরী।
গর্ভাবস্থায় আপনাকে গ্লুকোজ অবশ্যই পরিমাপ করে খেতে হবে। কারণ অতিরিক্ত গ্লুকোজ খেলে সুগার লেভেল অনেক বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ ডি খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ ডি খাওয়া যাবে। বাজারে গ্লুকোজ গুলো গ্লুকোজ ডি নামেই কিনতে পাওয়া যায়। তাই গ্লুকোজ আর গ্লুকোজ ডি হচ্ছে একই। শুধু ব্র্যান্ড হিসেবে নামের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

গ্লুকোজ এর কাজ কি

গ্লুকোজ হল এক প্রকারের শর্করা যেটা মানবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। গ্লুকোজ শরীরের প্রত্যেকটা অংশে শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। গ্লুকোজ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো হলো।
  • শক্তি সরবরাহ করা।
  • হরমোন উৎপাদন করা।
  • সন্তানের বিকাশ গঠনে সাহায্য করা।
  • গ্লাইকোজেন সংরক্ষণ করা।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
  • মেটামলিজম বৃদ্ধি করা।
  • স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা।
  • এনজাইম উৎপাদন করা।
গ্লুকোজ আবার শরীরে অতিরিক্ত থাকলে সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পরে। যেমন: ডায়াবেটিস। তাই সঠিক দিক নির্দেশনা মেনে গ্লুকোজ খাওয়ার প্রয়োজন হলে তারপরই খাওয়া উচিত।

গ্লুকোজ খাওয়ার নিয়ম

গ্লুকোজ খাওয়ার নিয়ম অবশ্যই কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে আপনি যদি গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খেতে চান তাহলে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে খাওয়া দরকার। গ্লুকোজ খাওয়ার নিয়ম গুলো হচ্ছে।
  • ডোজ নির্ধারণ
  • খাওয়ার সময়
  • শরীরের অবস্থান
  • রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে তারপর খাওয়া
  • পুষ্টিকর খাবারের সাথে ( ফল, শাকসবজি, ডিম, মাছ ও মাংস)
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা
  • ডায়াবেটিস থাকলে গ্লুকোজ না খাওয়া
  • দিনে অধিক বার না খাওয়া।
এছাড়াও গ্লুকোজ খালিপেটে খাওয়া ঠিক না। আপনি যদি এই ক্ষেত্রে শরীর দূর্বলতা মনে করেন তাহলে নির্ভয়ে গ্লুকোজ খেতে পারেন। তবে অবশ্যই কোনো পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে খেতে হবে। ব্যায়াম করার পর গ্লুকোজ খেলে সেটা তার হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনে।

গ্লুকোজ খাওয়ার পরিমাণ:

গ্লুকোজ সাধারণত ১ চামচ করে অর্থাৎ ৫ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। আর শরীর যদি খুবই ক্লান্তি থাকে তাহলে আপনি ১৫- ২০ গ্রাম অর্থাৎ ৩-৪ চামচ গ্লুকোজ খেতে পারেন। আর মিশ্রণটিতে ২০০-২৫০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

এতে করে খুব দ্রুত সেই আগের মতই এনার্জি ফিরে পাবেন। তবে বাড়তি সতর্কতার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারেন।

গ্লুকোজ ডি এর উপকারিতা

গ্লুকোজ ডি এর উপকারিতা আর গ্লুকোজ এর উপকারিতা একই। কারণ গ্লুকোজ এবং গ্লুকোজ ডি হচ্ছে একই জিনিস যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। যার কারণে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায়-গ্লুকোজ-খাওয়া-যাবে-কি

গ্লুকোজ ডি এর দাম

গ্লুকোজ ডি এর দাম ওজন হিসেবে নির্ধারণ করা হয় থাকে। তবে ব্র্যান্ড অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে দামের মধ্যে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে।
  • Glucose D for energy ৪০০ গ্রাম - দাম ২৫০ টাকা
  • SMC Bolt Glucose Powder ৪০০ গ্রাম - দাম ১৫০ টাকা
  • SMC Bolt Glucose Powder ২০০ গ্রাম - দাম ৭০ টাকা
  • Sunlight Glucose D ৪০০ গ্রাম- দাম ১১৫ টাকা
  • Glucomax D ৪০০ গ্রাম - দাম ১৪৪ টাকা
  • Mini Pack Glucose D - দাম ১০ টাকা
বাজারে বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এবং বিভিন্ন দামের মধ্যেই পেয়ে যাবেন গ্লুকোজ ডি।

রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা কত

রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে 70-100 mg/dL। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এর থেকে বেশি থাকলে সেটা ডায়াবেটিস রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

শেষ কথা

গ্লুকোজ হচ্ছে এমন একটি পুষ্টি উপাদান যেটা আমাদের মানবদেহের শরীরে শক্তির একটি প্রধান এবং গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ। দুর্বল শরীরকে সতেজ করতে গ্লুকোজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্লুকোজ খাওয়া উচিত না। পরিমাণ মত খেলে সেটা শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে। তাই বলা যায় গর্ভাবস্থায় গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি না এই নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তা নয়। এছাড়াও যদি আপনি মনে করে থাকেন খেলে ক্ষতি হতে পারে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url