বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো জানুন
বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো জানা খুবই জরুরী। বাচ্চা হওয়ার পর
বেশির ভাগ মায়েদের ওজন কমতে থাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরে পুষ্টির চাহিদা
কমে যাওয়া, যার ফলে ওজন কমতে থাকে।
এই সময়ে যদি সঠিক খাদ্য, পুষ্টি এবং ডায়েট প্ল্যান করে নিজেকে প্রস্তুত করতে
পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই মোটা হতে পারবেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চা
হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো!
সূচিপত্রঃ বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায়
- বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায়
- বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের খাবার
- বাচ্চা হওয়ার পর মা শুকিয়ে যাওয়া
- বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমানোর উপায়
- বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমে যায় কেন
- বাচ্চা হওয়ার কত দিন পর পিরিয়ড হয়ত
- বাচ্চা হওয়ার পর পানি খেলে কি ওজন কমবে
- শেষ কথা
বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায়
বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো আমাদের সবার জানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে মোটা হওয়ার জন্য শরীরের ওজন বাড়াতে হবে। বিভিন্ন
শারীরিক সমস্যার জন্য বাচ্চা হওয়ার পর মায়েদের ওজন কমতে থাকে। তাই ওজন
বাড়াতে বা মোটা হওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো মাথায়
রাখা উচিত এবং নিয়মিত মেনে চলা উচিত।
পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
বাচ্চা প্রসবের পর শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিন
সহ নানা ধরনের উপাদানের সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। প্রোটিন যুক্ত খাবার, যেমন:
মাংস, দুধ, ডিম, ও ডাল সহ উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া। তারপর কমপ্লেক্স
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া,যেমন: ভাত, মিষ্টি আলু, শাকসবজি ও ফলমূল
খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারী। এইগুলো শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ বাড়ানো
পুষ্টি উপাদান বাড়ানোর জন্য খাবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান। একসঙ্গে বেশি খেতে
না পারলে দিনে ৬-৭ বার অল্প অল্প করে খেতে পারেন। এতে করে শরীরের পুষ্টি
চাহিদা ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হবে।
নিয়মিত ব্যয়াম করা
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যামায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই মোটা
হওয়ার জন্য অবশ্যই দিনে কমপক্ষে হলেও ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিৎ।
এতে করে শরীরের হজম শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম
বিশেষ করে মায়েরা বাচ্চা হওয়ার পর ঠিকমত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে পারেন না তাদের
বাচ্চার কারণে। যদি আপনি সময় করে একটু আলাদা ভাবে ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে
পারেন তাহলে অবশ্যই মোটা হতে পারবেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ পানি আমাদের শরীরের
তাপমাত্রা ও শারীরিক অবস্থা পরিচালনা করেন। দিনে কমপক্ষে ৩-৪ লিটার পানি পান
করতে হবে।
অতিরিক্ত পুষ্টিহীনতা
শরীর অতিরিক্ত ভাবে দুর্বল, ওজন কমে যাওয়া এবং পুষ্টি ঘাটতি থাকলে অবশ্যই
একজন পুষ্টিবিদ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাল্টিভিটামিন ঔষুধ খেতে পারেন।
এতে করে আপনার পুষ্টিহীনতা কমবে এবং শরীরের ওজন বাড়বে।
অতএব বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার জন্য অবশ্যই উপরের নিয়ম গুলো আপনাকে মেনে
চলতে হবে। যদিও বা সবগুলো নিয়ম মানা সম্ভব নয় তাবুও নিয়মগুলো মানার চেষ্টা
করবেন।
আরো পড়ুন ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের খাবার
বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের খাবার কি হবে সেটি জন্য খুবই দরকারি। কারণ মায়ের
খাবার ও পুষ্টির উপর নির্ভর করে বাচ্চার শারীরিক বিকাশ। এই সময় মায়েকে
প্রোটিন যুক্ত খাবার, ফল ও শাকসবজি, কার্বোহাইড্রেট, দুধ ও দুধজাত খাবার,
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার, প্রোবায়োটিক খাবার এবং ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত
খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন।
কারণ এই খাবার গুলো মা ও নবজাতক শিশু দুইজনেরই পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। নিচে
বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের খাবার প্রধান প্রধান খাবার গুলো উল্লেখ করা হলো।
1. প্রোটিন:
- মাছ
- মাংস
- ডিম
- ডাল
- দুধ ও দুধজাত খাবার
2. কার্বোহাইড্রেট:
- ভাত
- রুটি
- আলু
- শস্য জাতীয় খাবার
3. ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার:
- বাদাম
- তেল (অলিভ ওয়েল, নারিকেল তেল)
- অ্যাভোকাডা
4. ভিটামিন ও মিনারেল:
- সবুজ শাকসবজি
- ফলমূল
5. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা:
- একজন মায়ের দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা দরকার। কারণে এই সময়ে মায়েদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পান করা শরীরের জন্য উপকারী।
সুতরাং মা ও নবজাতক বাচ্চার জন্য এই খাবার গুলো খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই
সকল পুষ্টি মায়ের শরীরে দুধের উৎপাদন বাড়ায়। তাছাড়া এই সময় মায়ের চিনি
যুক্ত খাবার খাওয়া পরিহার না এড়িয়ে চলতে হবে। তবে দুধ এবং দুধজাত খাবার মা
ও নবজাতক বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাচ্চা হওয়ার পর মা শুকিয়ে যাওয়া
বাচ্চা হওয়ার পর মা শুকিয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ হচ্ছে শারীরিক সমস্যা।
বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ভিটামিনের প্রায়োজন
হয়, যা কিনা এই সময়ে পূরণ করা সম্ভব হয় না।
এই সময়ে শরীরের শক্তি কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা সহ নানা ধরনের সমস্যার দেখা
দেয়। তাছাড়া কয়েকটি কারণে বাচ্চা হওয়ার পর মা শুকিয়ে যেতে পারে, যেমন:
- শরীরের শারীরিক পরিবর্তন
- অর্থোপেডিক চাপ ও পেশী দূর্বলতা
- মানসিক চাপ
- শরীরে পুষ্টি ঘাটতি
- ঘুম ও বিশ্রামের অভাব
- পানি কম পান করা
- নিয়মিত ব্যায়াম না করা
মূলত এই কারণে বাচ্চা হওয়ার পর মাযের শরীর শুকিয়ে যায়। তাই বাচ্চা হওয়ার
পর মোটা হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাবার,
নিয়মিত ব্যায়াম এবং ঘুম ও বিশ্রামের দরকার। তবে এই সময় একজন পুষ্টিবিদ
অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।
বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমানোর উপায়
বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমানোর উপায় গুলো জানা এবং মেনে চলা একজন নারীর জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারী বাচ্চা প্রসবের পরে অতিরিক্ত ভালো ওজন বাড়তে
থাকে।
এটি মূলত বাচ্চা হওয়ার পর শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাট, অতিরিক্ত খাদ্য
গ্রহণ, চর্বি জাতীয় খাবার, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব সহ শারীরিক সমস্যার কারণে
হয়। তাই সঠিক ভাবে ডায়েট প্ল্যান এবং খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন
কমানো যায়। যেমন:
1. খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা
- সুষম খাদ্য গ্রহণ
- ক্যালোরি যুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ
- পর্যাপ্ত পানি পান করা
2. নিয়মিত ব্যায়াম করা
- বাচ্চা হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাঁটাহাঁটি করা
- স্ট্রেচিং ও যোগ ব্যায়াম
3. ঘুম ও বিশ্রাম করা
- পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এতে করে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে
4. মানসিক চাপ কমানো
- অতিরিক্ত টেনশন করা যাবে না
5. অতিরিক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ
- অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
সুতরাং আপনি মা হওয়ার পর যদি ওজন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়ম অনুসরণ করে
ধীরে ধীরে নিজের খাদ্যাভাস এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আপনি
যদি খুব দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে সেটি আপনার শরীর এবং নবজাতক বাচ্চা
দুইজনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কারণ এই সময়ে বাচ্চার পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি থাকে যা আপনার বুকের দুধ পান
করার মাধ্যমে আপনার বাচ্চার শরীরে যায়। তাই ওজন কমানোর আগে অবশ্যই বাচ্চার
কথা চিন্তা করতে হবে অন্যথায় বাচ্চার শারিরীক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে
পারে।
বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমে যায় কেন
বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমে যায় কেন এর কারণ হলো বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের শরীর
থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে আসে । তাছাড়া হরমোন গত কারণেও শারীরিক অবস্থার
পরিবর্তন হতে শুরু করে। এর ফলে বাচ্চা হওয়ার পর মায়ের ওজন কমে যায়। তবে
বিশেষ করে ওজন কমে যায় যে যে কারণে, যেমন:
- শারীরিক পরিবর্তন
- প্রসবের পর অতিরিক্ত পরিমাণে তরল কমে যাওয়া
- খাদ্য গ্রহণে পরিবর্তন
- শারিরীক পরিশ্রম
- মানসিক চাপ
- পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
- বাচ্চাকে স্তন্যপান করালে ক্যালোরি খরচ হয় যার কারণে ওজন কমে যায়
তাছাড়া বাচ্চা হওয়ার পর ওজন কমে যায় কেন এই সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে একজন
ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বাচ্চা হওয়ার কত দিন পর পিরিয়ড হয়
বাচ্চা হওয়ার কত দিন পর পিরিয়ড হয় এটা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। এটা
একেক জন নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। তবে সাধারণত বাচ্চাকে বুকের দুধ
খাওয়ানোর কারণে পিরিয়ড শুরু হতে ৬-৮ মাস আবার অনেক সময় ১ বছর পর্যন্ত সময়
লাগে।
আর অন্য দিকে বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে
পিরিয়ড শুরু হয়। তবে এইক্ষেত্রে যদি আপনার এই সময়ের মধ্যে পিরিয়ড
শুরু না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন।
বাচ্চা হওয়ার পর পানি খেলে কি ওজন কমবে
বাচ্চা হওয়ার পর পানি খেলে কি ওজন কমবে এটা আসলে তেমন সরাসরি কার্যকরী না।
তবে এটি ওজন কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বাচ্চা হওয়ার পর পানি খেলে শরীর
হাইড্রেশন থাকে এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া খাবার খাওয়ার আগে পানি খেয়ে নিলে পেট তাড়াতাড়ি ভরে যায়। এতে করে
শরীরে কম খাদ্য গ্রহণে ওজন কমতে পারে। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান না।
তাছাড়া পানি শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন ও বর্জ্য বের দিতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
তাই পরিশেষে বলা যায় আপনি যদি বাচ্চা হওয়ার পর মোটা হওয়ার উপায় গুলো
নিয়মিত মেনে চললে অবশ্যই আপনি মোটা হতে পারবেন। এই জন্য আপনাকে নিয়মিত
পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাবার খেতে হবে। সময় মত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে । আর মোটা
হওয়ার জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার
খেতে হবে এবং চিনি যুক্ত খাবার এবং চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
আজকের আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার কোনো উপকার হয় , তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে
শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ 🌻
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url