স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার আগে যেসব বিষয়ে জানা দরকার

 

স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার আগে যেসব বিষয়ে জানা দরকার, কারণ আপনি যদি মোবাইল সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে খুব বিপদে পড়ে যাবেন ফোন কেনার সময়। বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন ছাড়া এক মিনিটও চলা অসম্ভব। মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেন মার্টিন কুপার। আর সময়টি ছিল ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল।

বর্তমান সময়ে স্মার্ট মোবাইল ফোন আমাদের সকলের কাছেই খুবই উপকারী ও প্রয়োজনীয় ডিভাইস হিসেবে গুরুত্ব লাভ করেছে। আমারা অনেকেই না বুঝে শুনে মোবাইল ফোন কিনে ফেলি। আর পরে গিয়ে বুঝতে পারি এই মোবাইল ফোন আমার জন্য সঠিক না। তবে আজকে সেটাই জেনে নেওয়া যাক মোবাইল ফোন কেনার আগে আমাদের যেই যেই বিশেষ জিনিস গুলো দেখে মোবাইল ফোন কিনতে হবে।

সূচিপত্রঃ স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার আগে যেসব  বিষয়ে জানা দরকার

মোবাইল ফোন কাকে বলে

মোবাইল ফোন শব্দের অর্থ হলো ঘূর্ণয়মান। অর্থাৎ যে কোন পৃথিবীর সকল স্থানে নিয়ে যাওয়া যায় এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে তাকে মোবাইল ফোন বলে।

আরো পড়ুনঃ ১৫০০ টাকার মধ্যে ভালো রাউটার ২০২৪

মোবাইল ফোন কত প্রকার ও কি কি

মোবাইল ফোন প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ 

  1. C.D.M.A (Code Division Multiple Access)
  2. G.S.M (Global System for Mobile Communication)

মোবাইল নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ

নেটওয়ার্কিং এর উপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
  • C.D.M.A ( Code Division Multiple Access) মানে 2G নেটওয়ার্ক, যা আসলে আমাদের বাটন ফোন ব্যবহার করা হয়।
  • G.S.M (Global System for Mobile Communication) মানে 3G, 4G, 5G নেটওয়ার্ক, যা আসলে আমাদের স্মার্ট মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয়।

স্মার্ট মোবাইল ফোনে কি কি করা যায়

বর্তমান সময়ে স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সব ধরনের কাজ মোটামুটি করা সম্ভব। যেমন একজনের সঙ্গে আরেকজন কথা বলা, গেম খেলা, ছবি তোলা, গান শোনা, ভিডিও দেখা, ভিডিও কলে কথা বলা সহ অনলাইনে যাবতীয় কাজ কার্যক্রম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে মানুষের মোবাইল ফোন ছাড়া এক মিনিটও সঠিকভাবে চলাফেরা করা সম্ভব না। ব্যক্তি জীবনে ও বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ গ্রিন টি কখন ও কিভাবে খাবেন এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার আগে যেসব জিনিস গুলো জানা জরুরী

স্মার্টফোন কেনার আগে আমাদের প্রথমে যে জিনিসগুলো বিশেষভাবে জানা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রসেসর। এই প্রসেসরই হচ্ছে মোবাইল ফোনের প্রাণ। প্রসেসর যত শক্তিশালী হবে আপনার মোবাইল ফোন ততই ভারি ভারি কাজগুলো লোড নিতে পারবে। তারপরের বিষয়গুলো হচ্ছে মোবাইল ফোনের র‍্যাম কত জিবি এবং রম কত জিবি। র‍্যাম এবং রম যত বেশি হবে মোবাইল ফোনের পারফরম্যান্স তত দ্রুত হবে। 

আর মোবাইল ফোনে সামনেও পিছনে কত মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা এবং কোন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে সে বিষয়গুলো মাথায় রাখা। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে ক্যামেরার ছবির পারফরম্যান্স তত নিখুঁত হবে। আরো একটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মোবাইল ফোনে কত এম্পিয়ারের ব্যাটারি দেওয়া রয়েছে। ব্যাটারির এম্পিয়ার যত বেশি হবে মোবাইল ফোনের চার্জ তত দীর্ঘ হবে। মোবাইল ফোন কেনার সঙ্গে দেখে নিতে হবে মোবাইল ফোনটি কত ওয়াট পর্যন্ত চার্জিং ওয়াট সাপোর্ট।

তাছাড়া ফোনের ডিসপ্লেতে কি ধরনের ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে তা জানাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লে প্রোটেকশন হিসেবে কোন ধরনের প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়েছে তা জানা অত্যাবশ্যক। কারণ ভুল করে বা কোন কারণবশত আপনার হাত থেকে ফোনটি পড়ে গেলে সেই প্রটেকশনটি আপনার ফোনকে রক্ষা করবে। তাই আমাদের ফোন কেনার সময় এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে মোবাইল ফোন কিনতে হবে। নিচে জেনে নেওয়া যাক মোবাইল ফোনের সেই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।

প্রসেসর কি

প্রসেসর হচ্ছে এমন একটা চিফ যেটা মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি মোবাইল কম্পিউটার ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেট এর প্রধান অঙ্গ। প্রসেসর মূলত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রসেসর এর মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটারের সকল কমান্ড পরিচালিত হয়। প্রসেসর মূলত আমাদের দেওয়া কমান্ডগুলো বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। তাই পরিশেষে বলা যায় প্রসেসর সকল শক্তি বা কাজের মূল প্রাণকেন্দ্র।

আরো পড়ুনঃ ১৫০০ টাকার মধ্যে ভালো রাউটার ২০২৪ 

র‌্যাম (RAM) কি এবং কিভাবে কাজ করে

র‍্যাম শব্দের অর্থ Random Access Memory। র‍্যাম একটি অস্থায়ী মেমোরি। অস্থায়ী বলার কারণ হচ্ছে, র‍্যাম তখনই কাজ করে যখন মোবাইলে বা কম্পিউটারে কোন অ্যাপস রানিং অবস্থায় থাকে। তখন অ্যাপস এর ব্যবহৃত ডাটা গুলো সম্পূর্ণ র‍্যাম উপর নির্ভর করে।

রম (ROM) কি এবং কিভাবে কাজ করে

রোম শব্দের অর্থ Read Only Memory। রম হচ্ছে একটি স্থায়ী মেমোরি যেখানে সমস্ত ডেটা সংরক্ষণ করে রাখা যায়। উদাহরণস্বরূপ আপনি যে কোন একটি ছবি বা ভিডিও যতক্ষণ না ডিলিট করবেন ততক্ষণ সেটি স্থায়ীভাবে আপনার রম বা মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকবে।

র‍্যাম ও রম এর মধ্যে পার্থক্য

র‍্যাম ও রম এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। র‍্যাম তুলনামূলক রমের তুলনায় গতি অনেক ফাস্ট হয়ে থাকে। আর অন্যদিকে রম তুলনামূলক গতি কম হয়ে থাকে। 

র‍্যাম ও রম এর দামের পার্থক্য

র‍্যামের গতি অনেক বেশি ফাস্ট হওয়ার কারণে এটির দাম একটু বেশি। আর অন্যদিকে রমের গতি তুলনামূলক একটু কম হওয়ার কারণে দাম অনেকটা কম এবং সাশ্রয় মূল্যে পাওয়া যায়।

ক্যামেরা মেগাপিক্সেল যেমন হতে হবে

সাধারণত স্মার্টফোনের ক্যামেরা মেগাপিক্সেল বা রেজুলেশন যত বেশি হবে সেই ফোনের ক্যামেরা পারফরম্যান্স বা ছবির কোয়ালিটি তত ভালো হবে। আর বর্তমান সময়ে মানুষের প্রথম পছন্দ হিসেবে ক্যামেরাকেই ধরা হয়। আর আপনি যদি ক্যামেরা প্রেমী হয়ে থাকেন বা ছবি তোলার নেশা থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বেশি মেগাপিক্সেল যুক্ত ক্যামেরা নিতে হবে। 

আরো যেসব বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ভিডিও করার ক্ষেত্রে আপনার ক্যামেরাতে OIS অর্থাৎ অপটিক্যাল ইমেজ স্টাবিলাইজেশন আছে কিনা সেটা আপনাকে দেখে নিতে হবে। OIS এর কাজ হচ্ছে ভিডিও করার সময় আমাদের হাত যে পরিমাণ কাপে বা নড়ে সে থেকে ভিডিও কে রক্ষা করা। এক কথায় বলতে গেলে স্মুথ একটা ভিডিও পারফরমেন্স যেটা স্টেবল থাকে। ভিডিওর মধ্যে কোন কাপাকাপি থাকে না। তাই আপনাকে স্মার্ট ফোন নিতে গেলে ক্যামেরার এই বিষয়গুলো অবশ্যই মনোযোগ সহকারে দেখতে হবে।

ডিসপ্লে রেজুলেশন যেমন হতে হবে

স্মার্টফোনের ডিসপ্লে রেজুলেশন বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই ডিসপ্লেতে কি পরিমাণ পিক্সেল রয়েছে। আপনার ডিসপ্লে রেজুলেশন যত বেশি পিক্সেল হবে আপনার ডিসপ্লে কোয়ালিটি তত বেশি ব্রাইট হবে। তাছাড়া সাধারণত মিডিয়াম কোয়ালিটির ফোনে HD (1280*720px)রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর আরেকটু বেশি বাজেট ফোনে Full HD (1920*1080px) রেজুলেশন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এর থেকে আরও বেশি বাজেটের ফোনে Quad HD বা 2K (2560*1440px) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই ফোন কেনার সময় ডিসপ্লে ও বাজেট অনুযায়ী এই রেজুলেশনের ডিসপ্লে দেখে আপনি নিতে পারেন।

ডিসপ্লে প্রোটেকশন যেভাবে চিনবেন

স্মার্টফোনের একটি বড় অংশ হচ্ছে ডিসপ্লে। আর এই ডিসপ্লে কে নিরাপদ রাখার জন্য স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরনের গ্লাস প্রোটেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই প্রোডাক্টারগুলোকে মূলত গরিলা গ্লাস বলা হয়। আরে গরিলা গ্লাসের বিভিন্ন প্রজন্ম বা জেনারেশন রয়েছে। শুরুতে ২.৫ ডি গ্লাস ব্যবহার করা হতো, তারপর ধীরে ধীরে তৃতীয় প্রজন্মের গ্লাস প্রটেক্টর হিসেবে আসলো গরিলা গ্লাস থ্রি।

 তারপর চতুর চতুর্থ প্রজন্মের গরিলা গ্লাস ফোর এবং পঞ্চম প্রজন্মের গরিলা গ্লাস ফাইভ আর বর্তমানে লেটেস্ট যে প্রযুক্তি রয়েছে সেটির মাধ্যমে আনা হয়েছে গরিলা গ্লাস ভিক্টাস। বর্তমান বিশ্বে এই পর্যন্ত সব থেকে ভালো এবং শক্তিশালী ক্লাস প্রটেক্টর হিসেবে গরিলা গ্লাস বেশ জনপ্রিয়। তাই আপনাকে স্মার্টফোন কেনার সময় এই বিষয়গুলো অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ ১৫০০ টাকার মধ্যে ভালো রাউটার ২০২৪

ব্যাটারি যেমন হলে ভালো হবে

স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার সময় অবশ্যই ব্যাটারি কত অ্যাম্পিয়ার সেটি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ব্যাটারির অ্যাম্পিয়ার এর উপর নির্ভর করে স্মার্ট মোবাইল ফোনটি কত সময় পর্যন্ত চলতে পারে। স্মার্ট মোবাইল ফোনের ব্যাটারির অ্যাম্পিয়ার তত বেশি হবে ফোনটি তত বেশি ব্যাকআপ দিতে পারে। সাধারণত বর্তমান সময়ে আমাদের 4000mhA   অ্যাম্পিয়ারের কম ব্যাটারি যুক্ত মোবাইল ফোন কেনা যুক্তিযুক্ত হবে না। তাই মোবাইল ফোন কেনার সময় এই দিকটি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

চার্জার কত ওয়াট নেওয়া উচিত

আমাদের স্মার্টফোন কেনার সময় স্মার্টফোনের চার্জার কত ওয়াট রয়েছে তা জানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্মার্টফোনের চার্জিং ওয়াট যত বেশি হবে স্মার্টফোনটি তত দ্রুত চার্জ হবে। তাই আপনাকে সর্বনিম্ন ১৮ ওয়াট চার্জিং সিস্টেম সাপোর্ট করে এইরকম ফোন কেনা উচিত। এর বেশি হলেও কোন অসুবিধা নেই। আপনি যত বেশি ওয়াট যুক্ত ফোন নেবেন আপনার জন্য তত ভালো। তাই এই দিকটি আপনাকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় যে, একটি স্মার্ট ফোন কিনতে হলে আমাদেরকে প্রথমে প্রসেসর, র‍্যাম, রম , ফোনের ডিসপ্লে রেজুলেশন, ডিসপ্লে প্রোডাকশন, ক্যামেরার মেগাপিক্সেল, ব্যাটারি অ্যাম্পিয়ার, চার্জিং ওয়াট এই বিষয়গুলো অবশ্যই জেনে তারপর স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url